ধারাবাহিক উপন্যাস
লাইফ জ্যাকেট দূরে সরে যাওয়ার পেছনের ঘটনাটা অর্পিতার কাছে এখনো অজানা। বিষয়টা যে কতটা ভয়াবহ বিপদের হাতছানি তাও আঁচ করতে পারেনি
উদয় ঘোষাল কয়েকবার চেষ্টা করেছে পায়ের পাতাটা এক নজরে দেখতে। চেষ্টা করেও আবছা আঁধারে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে না কিছুই। যদিও বাইরের
রাতের আঁধার ঘনিয়ে আসতেই অর্পিতা দুশ্চিন্তায় পড়ল, বুক ফেটে কান্না আসতে লাগল। রাত যাপনের ব্যবস্থা করতে না পারলে ঘোর বিপদে পড়বে।
সমুদ্রের রূপ একেক সময় একেক রকম। মুহূর্তে শান্ত; মুহূর্তেই উত্তাল। ক্ষণিকে টলমল দিঘির জল, ক্ষণিকেই ফণা তোলা কেউটে। যে নাবিক
উদয় ঘোষাল ভয়ে ঠক ঠক করে কাঁপছে। এই বুঝি ধরা পড়ে যাচ্ছে। দুর্বল শরীর নিয়ে দৌড়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। হাঁপরের মতো বুক ওঠানামা
শিকার ধোঁকা দিয়ে পালিয়ে যেতে পারে, এমনটা ভাবেনি নরখাদকের দল। কল্পনাও করেনি সভ্য সমাজের মানুষ এতটা চতুর হতে পারে। ওদের ধারণা দ্বীপ
উদয় ঘোষালের হুঁশ ফিরে আসতেই দুই হাঁটুর মাঝখান থেকে মাথাটা টেনে তুলল। অনেকক্ষণ মাথা নিচু করে হাঁটু চাপা দিয়ে রেখেছিল সে।
সৈকতের কাছ ঘেঁষে বনের দক্ষিণ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে অর্পিতা। দ্বীপবাসীর বাসস্থান খুঁজতে ওদের পেছন পেছন এই পর্যন্ত এসেছে। ওরা সৈকত
তিয়াসকে দেখেই অর্পিতার মা হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলেন। কাঁদতে কাঁদতে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘বাবা, কোথায় ছিলে তোমরা? অর্পিতা কোথায়,
আনুমানিক সকাল নয়টা। সৈকতে কুড়িয়ে পাওয়া বহিরাগত লোকটার হাত-পা বেঁধে বাঁশের সঙ্গে ঝুলিয়ে দ্বীপবাসী ওদের বাসস্থানের উদ্দেশে
পাকা তেলাকুচা খাওয়ার পর অর্পিতার শারীরিক দুর্বলতা সামান্য কেটেছে। তবে পিপাসা মেটেনি। এই মুহূর্তে পানির খুব প্রয়োজন। পানি খেতে
সভ্য সমাজের সঙ্গে দ্বীপবাসীর কোনো যোগাযোগ নেই। ওরা আদিম অধিবাসী। কয়েক হাজার বছর ধরে বংশ পরস্পরায় এই দ্বীপে বসবাস করছে।
সমুদ্র শান্ত। ফণা তোলা কেউটের মতো ফোঁস ফোঁস আওয়াজ করলেও এখন আর সমুদ্রের তর্জন গর্জন নেই। ঢেউয়ের গতিও হ্রাস পেয়েছে। ছোট
খুব ভোরে জ্ঞান ফিরে এলো অর্পিতার। চোখ খুলতেই সে লক্ষ্য করল অপরিচিত একটা সৈকতের বালুকাবেলায় কাত হয়ে পড়ে আছে। ফর্সা আঁধারে আশপাশে
আনুমানিক সকাল সাড়ে আটটা। রোববার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০০৪ সাল। কোনো ধরনের সতর্কতা সংকেত না দেখিয়েই শান্ত সমুদ্র হঠাৎ উত্তাল হয়ে উঠল।